প্রথমবারের মতো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় ৫০ লাখ ভোটার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। প্রথমবারের মতো ভোট নিয়ে নানান আলোচনা চলছে প্রবাসীদের মধ্যে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই লক্ষ্যে ১৮ নভেম্বর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে নিবন্ধন চূড়ান্ত করলেই ব্যালট পেপার চলে যাবে ভোটারদের কাছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে ব্যালট পৌঁছানোর পর, ভোট প্রদান শেষে সেটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বনিম্ন ১৫ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সৌদি আরবে ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে থাকতে ভোট দিতে পারিনি। এবার ইলেকশন কমিশন ভোটের ব্যবস্থা করেছে। ৫ আগস্ট না হলে এই সুযোগ হতো না। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসেও নিজের দেশে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে অংশ নিতে পারবো। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি শ্রমিক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা বহু বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি। এর আগে শতবার দাবি জানিয়েও ভোটের অধিকার আদায় করতে পারিনি। অবশেষে রাষ্ট্র আমাদের কথা শুনেছে। আশা করব প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা যেন না হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত দিলারা আক্তার বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, যদি সব প্রবাসী ভোট নেওয়া হয়। দেশের নির্বাচনে আমাদের প্রবাসীদের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য ভোটের গুরুত্ব রয়েছে। এতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে নানান আলোচনা রয়েছে প্রবাসে। ভোটে কারচুপি কিংবা প্রবাসীদের ভোট যেন যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় সেই দাবিও জানিয়েছেন প্রবাসীরা। ইতালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সংগঠন ইতালি-বাংলা ফোরামের সভাপতি তাইফুর রহমান বলেন, ভোট নিয়ে তো আমরা আনন্দিত। প্রবাসেও প্রতিটি দলের লোকজন কার্যক্রম, প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা আশা করি, প্রতিটি প্রবাসী যেন পোস্টাল ব্যালটপেপার পান। যেহেতু বিষয়টি অনলাইন সিস্টেম ও মোটামুটি লম্বা সময়ের ব্যাপার-এই পুরো প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ হয়, শক্ত মনিটরিং করা হয়। তিনি বলেন, প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে এটা কম। যাদের পড়াশোনা কিংবা জানাশোনা কম, তাদের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট গাইড করতে হবে। মিনিমাম ১ কোটি প্রবাসী যেন ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। এবার প্রথমবারের মতো ভোটের আয়োজনে সরাসরি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশন বা দূতাবাসের সরাসরি কার্যক্রম না থাকলেও প্রচারণার কাজ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল বলেন, প্রবাসে বৈধ অবৈধ সবাই ভোট দিতে পারবে। যাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে, ভোটার হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পোস্টাল অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকবে। প্রবাসের ভোটের কার্যক্রমে হাইকমিশন সরাসরি জড়িত না হলেও মানুষকে জানানো আর প্রচারণার কাজটা আমরা করছি। এরই মধ্যে পাবলিসিটি শুরু হয়েছে, যে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের জন্য ভোটের সুযোগ করেছে। এবার কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবে, কীভাবে ভোট দেবে সেটা নির্বাচন কমিশন বলে দেবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে যান। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকেন উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, ওমান ও বাহরাইন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আইটি শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে বর্তমানে কতজন কর্মী আছেন সেটা নির্ধারণ করা নেই। আমাদের ছাড়পত্র নিয়ে যারা যায়, তারা আবার দেখা গেছে ছয় মাস পর চলে আসেন। এভাবে প্রতি মাসেই একেবারে চলে আসা লোকজনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তবু আশা করি এক কোটির বেশি কর্মী প্রবাসে থাকেন। বিশেষ করে উপসাগরীয় ছয়টি দেশে থাকেন ৬০ লাখের বেশি কর্মী।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা এখন মোবাইল অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য, এনআইডি ও পাসপোর্ট দিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাইয়ের জন্য অ্যাপে ফেস রিকগনিশন ও লাইভনেস টেস্ট সম্পন্ন করা হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় ব্যালট পেপার ডাকযোগে পাঠানো হবে। ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপার পুনরায় ডাকযোগে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রবাসী ভোটাররা যার যার আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ১৮ নভেম্বর চালু হওয়া ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে ভোটার নিবন্ধন করবেন। এই অ্যাপটির বিশেষত্ব হচ্ছে অ্যাপটির জিও লোকেশন অ্যানাবেল বা চালু থাকবে। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনোভাবেই এই অ্যাপটি চালু করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর প্রবেশ করানোর পর ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি আসবে। ওটিপি দিয়ে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির ছবি তুলে আপলোড করতে হবে। পরে দিতে হবে ভোটারের ছবি। রেজিস্ট্রেশনের সময় এনআইডির সঙ্গে ওই ভোটারের ফেসিয়াল রিকগনিশনও যাচাই করতে হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ জানিয়েছেন, শুধু ইসির অ্যাপে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটারদের ঠিকানায় ব্যালট পাঠানো হবে। প্রার্থীর প্রতীক চূড়ান্ত হওয়ার পরই অ্যাপ থেকে ভোটার তার আসনের প্রার্থী দেখে ভোট দিয়ে ব্যালট ফেরত পাঠাবেন বাংলাদেশে। প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো থেকে শুরু করে ভোট প্রদান শেষে সেগুলো রিটার্নিং অফিসে পাঠানো পর্যন্ত পুরো দায়িত্ব থাকবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের হাতে। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও প্রবাসী ভোটার প্রকল্পের পরিচালক কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহারের পর যখন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে তারপরই অ্যাপ থেকে স্ব স্ব আসনের প্রার্থী তালিকা জানতে পারবেন প্রবাসী ভোটাররা। ওই আসনে কোনো রাজনৈতিক দল বা তার পছন্দের প্রার্থীর প্রতীক ভোটার নিজেই দেখতে পারবেন অ্যাপে। সেখান থেকে প্রবাসী ভোটার ১১৯টি প্রতীকের মধ্যে তার পছন্দের প্রতীকের ব্যালটের পাশে টিক বা ক্রস চিহ্ন দেবেন।
প্রবাসী ভোটাররা যার যার আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ১৮ নভেম্বর চালু হওয়া ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে ভোটার নিবন্ধন করবেন। এই অ্যাপটির বিশেষত্ব হচ্ছে অ্যাপটির জিও লোকেশন অ্যানাবেল বা চালু থাকবে। যে কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনোভাবেই এই অ্যাপটি চালু করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর প্রবেশ করানোর পর ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি আসবে। ওটিপি দিয়ে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির ছবি তুলে আপলোড করতে হবে। পরে দিতে হবে ভোটারের ছবি। রেজিস্ট্রেশনের সময় এনআইডির সঙ্গে ওই ভোটারের ফেসিয়াল রিকগনিশনও যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ এনআইডি সার্ভারে ওই ভোটারের যে ছবি আছে ফেস রিকগনিশনের সময় চেহারার সঙ্গে মিনিমাম ৭০ শতাংশ মিল থাকতে হবে। ক্যামেরার সামনে বাঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে ভেরিফিকেশনে পর চেহারার সঙ্গে মিললে ‘আপনি এখন নিবন্ধিত’ লেখা প্রদর্শিত হবে অ্যাপে। নিবন্ধনের সময় প্রবাসী ভোটার যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেই ঠিকানায় প্রতীকসহ ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন আসনের ভোটার থাকলেও সব ভোটারের কাছে যাবে একই ব্যালট পেপার। যেখানে সবগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা ১১৯টি প্রতীক থাকবে ব্যালটে। প্রবাসী ভোটারের হাতে ব্যালট পেপার পৌঁছালেও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না কেউ। রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো খাম পেলে ভোটার অ্যাপে প্রবেশ করবেন। এরপর নির্দেশিকা দেখে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করবেন। পরে খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ভোটার তার আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখতে পাবেন। পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপার রিটার্ন খামে ভরে তারপর কাছাকাছি পোস্ট অফিসে পাঠাবেন। আগে থেকেই ডাক মাসুল পে করা থাকবে। সে কারণে এটা চলে আসবে দেশে স্ব স্ব ঠিকানায়।
পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে নিবন্ধন : পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে ১৯ নভেম্বর থেকে প্রবাসীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার ৩৬টি দেশে থাকা প্রবাসীরা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই নিবন্ধন করতে পারবেন। ২৪ নভেম্বর থেকে নিবন্ধন করতে পারবেন উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের ১৪টি দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন ইউরোপের ৪২ দেশে থাকা বাংলাদেশিরা। ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশিরা। ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১৮টি দেশের প্রবাসীরা। সৌদি আরব ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ১৪টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোট দেওয়ার জন্য পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
* প্রবাসে ভোট নিয়ে হাইকমিশনের উদ্যোগ * পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে নিবন্ধন
ত্রয়োদশ ভোটে প্রবাসে উচ্ছ্বাস
- আপলোড সময় : ২২-১১-২০২৫ ০৪:০১:৩১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-১১-২০২৫ ০৪:০১:৩১ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার